আজ বৃহস্পতিবার, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শামীম ওসমানের ১২ দিনের ফলাফল ডিস বাবু

সংবাদচর্চা রির্পোট:
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন নারায়ণঞ্জে যোগদানের পর থেকে মাদক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেছেন। তিনি ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ করেছে।

সম্প্রতি পুলিশের মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে যে সকল ব্যক্তিদের গ্রেফতার করেছেন তার অধিকাংশ ব্যক্তি শামীম ওসমানের সমর্থক বলে জানা গেছে। সর্বশেষ মেরিএন্ডারসনে পুলিশের অভিযানে ৬৮ জন কে গ্রেফতার ও বিপুল মাদক উদ্ধার করা হয়। মেরিএন্ডারসনে মাদক সরবরাহে ক্রীড়া সংগঠক তানভীর আহমেদ টিটু জড়িত । সেই ঘটনার পর থেকে নারায়ণগঞ্জ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। শাহ নিজামের বিরুদ্ধে পুলিশের জিডি, কাউন্সিলর সজলের বিরুদ্ধে অপহরনের অভিযোগ, জুয়ার আসর পরিচালনায় সাংবাদিক, শহর অচলের আলটিমেটাম দেয় খালেদ হায়দার খান কাজল। এর পর ৬ এপ্রিল শহরের ইসদাইর বাংলা ভবনে এক কর্মী সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কে উদ্দেশ করে শামীম ওসমান বলেছিলেন, খেলা হবে না। খেলা শুরু হবার আগেই খেলা শেষ হয়ে যাবে। এটা গাজীপুর না নারায়ণগঞ্জ। প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের খোজ খবর রাখেন। ১০ থেকে ১২ দিন অপেক্ষা করেন। টের পাইবেন। শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যে নগর বাসি বেশ আতংকে ছিলো।

অপরদিকে “ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না” রাইফেল ক্লাবে বলেছিলেন সেলিম ওসমান। এছাড়া এসপির সাথে দেখা করে বিদায়ের গানও শুনিয়ে ছিলেন তিনি। অন্যদিকে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি বলেছিলেন মামলা করবেন ফতুল্লা থানার সাবেক ওসি মঞ্জুর কাদের বিরুদ্ধে,তবে একি চিত্র দেখলো নারায়ণগঞ্জবাসী পহেলা বৈশাখের দিন একই টেবিলে সংসদ ও এসপি। সব কিছুই কি শেষ? এমন প্রশ্ন ছিল নগরবাসীর কিন্তু নতুন এক চিত্র দেখালেন এসপি হারুন অর-রশিদ গতকাল। সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলর ডিস বাবুর গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। তবে সাংসদ শামীম ওসমানকে কখনো কর্মীদের ছেড়ে যেতে দেখা যায নি। তিনি কর্মীদের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় এসেছেন। তবুও ছেড়ে যান নি কর্মীদের। জানা গেছে, কর্মীদের জন্য তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে আকারে ইঙ্গিতে হুশিয়ারীও প্রদান করেছেন। তিনি কর্মীদের জন্য দীর্ঘদিন যাবত একটি গোষ্ঠির সাথে লড়াইও করছেন। এছাড়া ফতুল্লা মডেল থানার সাবেক ওসি শাহ মঞ্জুর কাদেরের বদলিতেও তিনি ক্ষিপ্ত ছিলেন। এখন অপেক্ষা বাবুর প্রসঙ্গে?

এদিকে নারায়ণগঞ্জের সচেতন নাগরিকরা বলছেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে,এসপি হারুন দমে যাননি। তিনি তার অবস্থানে অটল রয়েছেন। তিনি চমক দেখাতে পারেন এটাই তার প্রমাণ ।

তবে, প্রশ্ন উঠেছে সাংসদ শামীম ওসমান এসপিকে ১২ দিনের যে কথা বলেছিলেন, তার কি হলো? এমন প্রশ্ন যখন সর্বত্র ঘুর পাক খাচ্ছিল ঠিক তখনই গ্রেফতার হলেন এই সাংসদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবু।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর পৌনে তিনটার দিকে শহরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে বন্দর থানায় দায়ের করা একটি চাঁদাবাজি মামলায় তাকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। বিকেলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

ডিস বাবুর গ্রেফতারের বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বাবুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। একটি চাঁদাবাজির মামলায় বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
জেলা পুলিশের সূত্র জানায়, ডিস ব্যবসায়ী হাসানের নিয়ন্ত্রনাধীন বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা থেকে আলীনগর অঞ্চলের কয়েক লক্ষ টাকার ডিস ক্যাবল (তার)সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেটে নিয়ে যায় বাবুর লোক হিসেবে পরিচিত সজিবসহ একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে ২ হাজারেরও উপরে গ্রাহক ডিস লাইন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বেশ কয়েকদিন ধরে। এ ঘটনায় কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু হাসানের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় ডিস ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি প্রদান করেন। ওই ঘটনার পর গেল মাসের ২৩ তারিখে হাসান বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন বাবুকে প্রধান আসামী করে। কিন্তু এরপরও কোনো কাজ হয়নি। এতে আব্দুল করিম বাবু আরো বেপরোয়া হয়ে সোনাকান্দা, আলীনগর এলাকায় বাবু তার বাহিনীর মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে ডিস লাইন সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু করে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি ডিস বাবুর নানা অপকর্ম তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি বাবুর এসব অপকর্ম উত্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনও করেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র সাহা জানান, হাসান নামে বন্দর এলাকার এক ডিস ব্যবসায়ী বাবুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকি ও তার ব্যবসা জবর দখলের অভিযোগ এনে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় ডিস বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থার প্রক্রিয়া চলছে।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুন যোগদানের পর বেশ কয়েকটি অভিযান চালায়। এসব অভিযানে শহরের ব্যাপক আলোচিত জুয়ার আসর, ফতুল্লার পাগলা মেরি এন্ডারসনে অভিযান চালিয়ে ৬৮ জনকে গ্রেফতার সহ মাদক উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজনদের নাম উঠে আসে। এছাড়াও পাগলার সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরু ও পাগলা সমবায় সমিতির সভাপতি টেনু গাজীকে চাঁদাবাজির মামলায় পৃথক সময়ে গ্রেফতার করে। তারাও সাংসদ শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচিত।

অপরদিকে সাংসদের ঘনিষ্ঠজন ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে জিডি দায়ের এবং শহরের সাবেক কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম মুন্নাসহ কাউন্সিলর কবির হোসাইনকে গ্রেফতারের ঘটনা ছিলো ব্যাপক আলোচিত। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ধারণা করা হচ্ছিলো এসপির সাথে সাংসদের সম্পর্কে বৈরিতা চলছিলো। এ নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন ৬ এপ্রিল জরুরী কর্মী সভায় বক্তব্য রাখেন সাংসদ শামীম ওসমান।

ওই কর্মী সভায় সাংসদ অনুসারি নেতাকর্মীরা এসপি হারুন অর রশীদকে ‘ঘুষখোর’ আখ্যা দিয়ে তার প্রত্যাহার দাবি করে নানা ধরণের স্লোগান দিতে থাকেন এবং এসপির প্রত্যাহার না হলে তারা দল থেকে পদত্যাগ করা কথা জানালে শামীম ওসমান সবাইকে আশ্বস্ত করেন এবং বলেন, “কাউকে পদত্যাগ করতে হবে না। মশা মারতে কামান লাগে না। খেলা হবে না। খেলা শুরুর আগেই শেষ হবে। প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের খবর রাখেন। ১০ থেকে ১২ দিন অপেক্ষা করেন, টের পাইবেন।” তবে সেই ১২ দিন বৃহস্পতিবার শেষ হলেও ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে বাবু?

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ